Wednesday, February 14, 2018

ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র ইতিহাস ও মুসলমানদের এই কুফরী দিবস থেকে বেচে থাকা কোশেশ।


ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র ইতিহাস ও মুসলমানদের এই কুফরী দিবস থেকে বেচে থাকা ফরয।
১।২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। তখন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তার ধারণা ছিল, বিবাহ বাধনে আবদ্ধহলে যুদ্ধেরপ্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয়। সে সময় রোমের খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ রাজার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোপনে নারী-পুরুষের বিবাহ বাধনের কাজ সম্পন্ন করতেন। এ ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার পর তাকে রাজার কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়। ভ্যালেন্টাইন রাজাকে জানালেন, খিষ্টধর্মে বিশ্বাসের কারণে তিনি কাউকে বিবাহবাধনে আবদ্ধহতে বারণ করতে পারেন না। রাজা তখন তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে থাকা অবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীনরোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন।
উল্লেখ্য, রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে এ ধর্মের প্রাধান্য ছিল। যা হোক, ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি অনুগতথাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন।অত:পর রাজার নির্দেশে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাহয়।
পরে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাধান্য সৃষ্টি হলে গির্জা ভ্যালেন্টাইনকে ‘Saint’ হিসেবে ঘোষণা করে। ৩৫০ সালে রোমের যে স্খানে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলসেখানে তার স্মরণে একটি গির্জা নির্মাণ করাহয়। অবশেষে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ফেব্রুয়ারিকে `Saint Valentine Day'হিসেবে ঘোষণা করেন।ভ্যালেন্টা ইন কারারক্ষীর যুবতী মেয়েকে ভালোবাসার কারণে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ফেব্রুয়ারিকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ ঘোষণা করেননি। কারণ, খ্রিষ্ট ধর্মে পুরোহিতদের জন্য বিয়ে করা বৈধ নয়। তাই পুরোহিত হয়ে মেয়ের প্রেমে আসক্তি খ্রিষ্ট ধর্মমতে অনৈতিক কাজ।তা ছাড়া, ভালোবাসার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে যেতে হয়নি।কারণ, তিনি কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন কারাগারে যাওয়ার পর। সুতরাং, ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ ও মৃত্যুদণ্ডদানের সাথে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক ছিলনা। তাই ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালোবাসা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’র মূল বিষয় ছিল না। বরং ধর্মের প্রতি গভীর ভালোবাসাই তার মৃত্যুদণ্ডের কারণ ছিল।
২।প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো। একদিন রোমের এক কারাপ্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। চিকিৎসা চলছিল। হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে গেল। ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ (কারও মতে ২৭০) খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখেছিলেন। কারাপ্রধান চিরকুটটি দিলেন মেয়েকে। তাতে লেখা ছিল, 'ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন।' মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখলো। তার অন্ধ দু'চোখে তখন ঝলমলে আলো। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারি ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইন্স ডে ঘোষণা করেন। সেই থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করছে মানুষ। আরেকটি সম্পূর্ণ ভিন্নমত আছে। এই মতের লোকেরা বলেন, ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে প্রিয়জনকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন, মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করত এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে। কারণ যাই হোক, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত ১৪০০ শতক থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন শুরু হয় মহাসমারোহে।
********************¬***************
আসলে সব গুলা কাহিনীর দেখবেন অনেক অংশই কমন।কিছু কিছু জায়গায় ভিন্নতা।
যাই হোক, এবার একটু দেখি বাণিজ্যিজীকরণ কিভাবে হলো।
********************¬*************
১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় কর্র্তৃক `Saint Valentine Day'হিসেবে ঘোষণার আগে এ দিনটি পৌত্তলিক ধর্মীয় উৎসবহিসেবে পালিত হতো। তখন তারা ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত লুপারকেলিয়া উৎসব পালন করত।
ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন ``Valentine Day'কার্ডে Cupid-এর প্রতীক ব্যবহার করাহয়। এ দিনে রোমানদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি ছিল, প্রেমের দেবী জুনুর আশীর্বাদ কামনায় যুবকদের মধ্যে যুবতীদের বন্টনের জন্য লটারিরআয়োজন। তারাযুবতী মেয়েদের নামলিখে একটি বাক্সে রাখতএবং লটারির মাধ্যমে যুবকরা এসে নাম তুলত। লটারিতে যারসাথে যার নাম উঠত এক বছরের জন্য তারা লিভ টুগেদার করত। এ ধরনের নানা অনৈতিকতা, কুসংস্কার ওভ্রান্ত বিশ্বাসে আচ্ছন্ন লটারির মাধ্যমে যুবতীদের বন্টনের রীতি ফন্সান্স সরকার ১৭৭৬ সালে নিষিদ্ধ করেছিল। ক্রমান্বয়ে এটি ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মান থেকেও উঠে যায়। ইংল্যান্ডেও এক সময় এটি নিষিদ্ধ করাহয়েছিল।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আধুনিক সভ্যতার এ যুগে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত প্রেমিক উৎসব চালু হলো কিভাবে? ইস্টার এ হল্যান্ড নামক এক চতুর কার্ড বিক্রেতা কোম্পানি প্রথম'What Else Valentine'নামে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আমেরিকান ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড বানায় এবং প্রথম বছরই ৫০০০ ডলারের কার্ড বিক্রি হয়। পরে সুযোগসনধানী মিডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় ভ্যালেন্টাইন ডে ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।
বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
কাফির, মুশরিক, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, নাছারা, বিধর্মীদের অনুসরণ করা হারাম। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে-
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّـهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি। (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ
অর্থ: তোমরা কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده رضى الله تعالى عنهم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغيرنا
অর্থ: হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন এ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে বিজাতীদের সাথে সাদৃশ্য রাখে। (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবাকর হয়েছে-
عَنْ حَضَرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (সুনানে আহমদ শরীফ, সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)
কোন মুসলমান এসব বিজাতীয় দিবস পালন করতে পারেনা।স্পষ্টত এটা কুফরী।ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামী হবার কারণ।আল্লাহ পাক আমাদেরকে এসব থেকে বেচে থেকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার তৌফিক দান করুন।আমীন।

No comments:

Post a Comment